আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু লবণ গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও লবণ চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জমি জবরদখল

ইমাম খাইর, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ ০২:২৫:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডীতে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু লবণ গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও লবণ চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জমি দখলে নিয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালীচক্র। তারা বিসিকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। চক্রটি ইতোমধ্যে জাল খতিয়ান সৃজন করেছে। 

নিজেদের ভূমিহীন দাবি করে বন্দোবস্তি নিয়েছে খতিয়ানভুক্ত জমির মালিকগণ। ভূমিদস্যুদের কারণে সরকারি পাইলটিং কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

 

বিসিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বিসিকের নিজস্ব ০.৫৪ এবং লীজকৃত ১৭.২৪ একরসহ মোট ৩০.০০ একর জমিতে ‘‘বঙ্গবন্ধু লবণ গবেষণা ইনিষ্টিটিউট ও লবণ চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। এরই প্রেক্ষিতে ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে, যা একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

 

বিসিকের ক্রয়কৃত জমি হতে ০.৪০ একর জমি নিজের দাবি করে চিহ্নিত একটি চক্র। যার গডফাদার শহর মিয়া নামক ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে বিসিকের জমি দখল হয়ে গেছে। আদালতের আদেশও তোয়াক্কা করছে না তারা। 

 

এছাড়া বিসিকের লীজকৃত ও লবণ উৎপাদন কাজের গবেষণায় ব্যবহৃত ১৭.২৪ একর জমি হতে ০.৫৫ একর বন্দোবস্ত নিয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার মাধ্যমে জবরদখল করে রেখেছে চিহ্নিত একটি সিন্ডিকেট। 

 

দখলবাজরা হলো, বজল আহমদ, আমান উল্লাহ, ফোরকান আহমদ, আরেফা বেগম ও জাহানারা বেগম। তারা একই পরিবারের সদস্য। 

 

বিসিক চৌফলদন্ডী মৌজায় ১৯৮১ সালের ২৪ অক্টোবর আবদুল নবীর নামে বিএস ৪১০ নম্বর খতিয়ানের মোট ৩.২৮ একর জমি হতে ০.৫৪ একর জমি রেজিষ্ট্রিযুক্ত ১৫৯৬ নম্বর কবলামূলে আরএস ৪৫২৬ নম্বর দাগ মোতাবেক বিএস ১০২২৭ নম্বর দাগের আন্দরের জমি ক্রয় করে সরেজমিনে দখল বুঝে নেয়। ১৯৮৫ সালে ক্রয়কৃত জমির সাথে বিসিকের অনুকূলে আরএস-৪৫২৬ দাগের খাস খতিয়ানভুক্ত ১৭.২৪ একর জমি জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে উন্নতমানের লবণ উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন ও নানামুখি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পত্র স্মারক নং-৩১.০০.০০০০.০৫১.৪৬.০১৩.১৩.১৩২, তাং-২৮/০৭/২০১৬খ্রি: অনুমোদন মোতাবেক সর্বশেষ ১৪৩৫ বাংলা সন পর্যন্ত ইজারা চুক্তি সম্পাদিত আছে এবং ১৪২৯ বাংলা সন পর্যন্ত ইজারা মূল্য পরিশোধ করেছে বলে জানা যায়।

 

বিসিক কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, অল্প জমিতে অধিক দানাদার পরিপক্ক লবণ উৎপাদনের পাইলটিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু ভূমি দস্যুদের অপতৎপরতার কারণে উক্ত পাইলটিং কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

বিসিকের নামে লীজকৃত জমি অন্যত্রে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানালে কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর মাধ্যমে ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে সরেজমিনে তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। স্মারক নং-৬১৫/ইউ:ভূ:অ:/ঈদগাঁও মূলে বিসিকের লীজকৃত উক্ত জমি ভুলক্রমে  বন্দোবস্ত প্রদান করায় সৃজিত খতিয়ান বাতিলের সুপারিশপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত সৃজিত খতিয়ান বাতিল হয়নি।  বরং বিসিকের কমকর্তা-কমচারীদের বিভিন্ন প্রকারের হুমকি-ধমকি প্রদান করছে দখলবাজচক্র। 

এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি বজল আহমদ গং এর বিরুদ্ধে এডিএম কোর্টে ১৭৬/২৪ নাম্বার মামলা দায়ের করে বিসিক। 

বিরোধীয় জমিতে প্রবেশাধিকারে বারিত আদেশ জারি করে আদালত। সেই আদেশও মানছে না দখলবাজচক্র। 

 

একইভাবে আরেক দখলবাজচক্রের নাম শহর মিয়া গং। তাদের বিরুদ্ধেও এডিএম কোর্টে মামলা করেছে বিসিক। যার মামলা নং-১৫৮/২৪। ওই মামলার শুনানি শেষে শহর আলীর বিরুদ্ধে প্রবেশাধিকার বারিত আদেশ প্রদান করেন বিচারক। কিন্তু তিনিও সেই আদেশ অমান্য করে জমি জবর দখল বজায় রেখেছেন। 

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিসিক ক্রয়কৃত জমিতে স্বত্ববান ও ভোগ দখল থাকাবস্থায় কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে পৃথক খতিয়ান সৃজনের আবেদন করলে নামজারী ও জমাখারিজ ০৫/১৯৯৯-২০০০ইং নং মামলামূলে বিসিকের নামে পৃথক বিএস ২০৪৭ নম্বর খতিয়ার সৃজন করে। কিন্তু বিসিকের স্বত্ব দখলীয় বিএস ১০২২৭ নম্বর দাগ উক্ত সৃজিত খতিয়ানে লিপিবদ্ধ না করে ভুলক্রমে ১০২২৫ নম্বর দাগ লিপিবদ্ধ করা হয়। বিষয়টি সংশোধন করার জন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর নিকট মিস মামলা নং-৪২/২০২৩ মূলে বিসিকের নামে সৃজিত ২০৪৭ নম্বর খতিয়ান পরিমার্জন করা হয়। 

 

এলাকাবাসী জানিয়েছে, ভূমিহীন হিসেবে বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ৫ জনের কেউই ভূমিহীন নয়। সকলেই জোত খতিয়ানের মালিক। 

 

সরকার এখানে বঙ্গবন্ধু লবণ গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও লবণ চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করলে জমি অধিগ্রহণ করবে। তখন ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনগুণ দামের আশায় প্রতারণামূলকভাবে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিতে পাঁয়তারা করছে। 

 

বিসিকের ডিজিএম মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়ার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, লবণ শিল্পের উন্নয়নে সরকারের মহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। 

 

চৌফলদন্ডী লবণ প্রদর্শনী কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের লবণ উৎপাদন সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়নমুখী কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে হবে। 

 

বঙ্গবন্ধু লবণ গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও লবণ চাষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল প্রকারের অতৎপরতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান বিসিকের ডিজিএম।