গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ১ লাখ গ্রাহকের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে এবার। ডিসেম্বর থেকে ১ লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড।
ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
জানা গেছে, কেজিডিসিএলের গ্রাহক সংখ্যা এখন প্রায় ৬ লাখ।
এরমধ্যে ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রথম দফায় ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনে কেজিডিসিএল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাস সাশ্রয়সহ গ্রাহক ভোগান্তি কমে আসায় প্রিপেইড মিটার স্থাপনে নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয় কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ।
‘ইন্সটলেশন অফ প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর কেজিডিসিএল পার্ট-৩’ নামের নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগর ও জেলার ১ লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রায় ২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কেজিডিসিএল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটাই কেজিডিসিএল এর নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
গৃহস্থালী পর্যায়ে ব্যবহৃত গ্যাসের অপচয় রোধ এবং গ্যাসের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে জাপান সরকারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। সম্পাদিত চুক্তির আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহায়তায় চট্টগ্রাম নগরে ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়। মিটার স্থাপনের পর গ্যাসের সাশ্রয়ী বিল এবং গুণগত মানসম্পন্ন টেকসই মিটারের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়।
এর ধারাবাহিকতায় কেজিডিসিএল এর নিজস্ব অর্থায়নে ২য় প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ১ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ হতে ৩০ জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রায় ২৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২য় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বায়েজীদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, চকবাজার, পাহাড়তলী, খুলশী, বাকলিয়া, সদরঘাট, কোতোয়ালী, হালিশহর, ডাবলমুরিং, বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা, আকবরশাহ, লালদিঘী, কর্ণফুলী, হাটহাজারী, পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই এলাকায় ১ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হবে। মিটার স্থাপনের জন্য উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের মাধ্যমে নির্বাচিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড জাপান (স্থানীয় প্রতিনিধি অনোডা ইনকর্পোরেশন) এর সঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
জাপান হতে ঠিকাদারের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত মিটার পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে এনে ডিসেম্বর থেকে মিটার স্থাপন কাজ শুরু হচ্ছে। পূর্ববর্তী ৬০ হাজার মিটার প্রকল্পের ক্ষেত্রে গ্রাহককে মিটার রিচার্জের জন্য কেজিডিসিএল নির্ধারিত লোকেশনে (ব্যাংক) যাওয়ার প্রয়োজন হতো। বর্তমান প্রকল্পের আওতায় উক্ত রিচার্জ ব্যবস্থার পাশাপাশি গ্রাহকের নিজ মোবাইলের মাধ্যমে কার্ড রিচার্জের ব্যবস্থা রাখা হবে। ফলে গ্রাহক ঘরে বসে কার্ড রিচার্জ করতে পারবে এবং বন্ধের দিন অথবা দিনের যে কোন সময় মিটার রিচার্জ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দ্রুত সময়েই কাজ শেষ করবো আমরা। এরপর মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করা হবে। গ্রাহক পর্যায়ে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে। ডিসেম্বরেই নতুন প্রকল্পের আওতায় প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। দুই বছরের মধ্যেই এই কাজ শেষ করতে চাই আমরা। গ্যাস সাশ্রয়ের পাশাপাশি গ্রাহকদের স্বস্তি দিতে চাই।
গ্যাসের অপচয় রোধের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পোস্টপেইড গ্রাহকরা গড়ে ৭৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। কিন্তু প্রিপেইড মিটারে এটি ৪০-৪৮ ঘনমিটার। এজন্য সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনবো আমরা। সবাই প্রিপেইড মিটারের আওতায় এলে গ্যাসের অপচয় কমবে। গ্রাহকদের ভোগান্তিও কমে আসবে। যতটুকু গ্যাসের ব্যবহার হবে, ততটুকুর টাকাই তারা দেবেন।
প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কারণে গ্যাস সম্পর্কিত দুর্ঘটনা কমে আসছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, যে এলাকায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন হয় সেই এলাকার পুরো লাইন চেক করি আমরা। ২০-৩০ বছর আগে স্থাপন করা এসব লাইনে ত্রুটি থাকলে মেরামত করা হয়। প্রিপেইড মিটার হওয়ায় গ্যাস লিকেজ হলে গ্রাহকরাও বুঝতে পারেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।
তিনি বলেন, প্রিপেইড মিটার রিচার্জ কার্যক্রম আরো সহজ করতে নির্দিষ্ট ব্যাংক এবং পিওএস সেন্টার ছাড়াও অনলাইন এবং বিকাশ, রকেট, নগদসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে রিচার্জ কার্যক্রম শুরু করতে কাজ করছি আমরা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও করা শেষ। এই কার্যক্রম শুরু হলে ঘরে বসেই প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা যাবে। গ্রাহকরা স্বস্তি পাবেন।