ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডবে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন উপজেলায় লবণের উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা। তবে লবণ উৎপাদন, মজুদ, বাজারের চাহিদা মনিটরিং ও বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে লবণের ক্ষতি হয়েছে এমন দাবি অস্বীকার করলেও সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শনে কৃষকের দাবির সত্যতা মিলেছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত নভেম্বর মাসের শুরু থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লবণ চাষের উপযুক্ত সময়। ঘূর্ণিঝড় মোখায় তেমন কোনো লবণের ক্ষতি হয়নি। বিসিকের ১২টি কেন্দ্র চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অবস্থিত। এই দুই জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ, উখিয়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় লবণ চাষ হয়। এসব এলাকায় চলতি বছর লবণ চাষ হয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে। চাষির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৪৬৭।
সোমবার (১৫ মে) সকালে সরোজমিনে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত টেকনাফ উপজেলা সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালী, শাহপরীর দ্বীপ,নোয়াপাড়া ও বড়পাড়া মাঠে লবণ চাষিদের সঙ্গে কথা হয়। লবণ চাষিদের সকলেই দাবি করছেন ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে লবণের মাঠে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
সাবরাং এর লবণ চাষি মো. মানিক বলেন, প্রত্যেক লবণ চাষি ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমার জমিতে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের কারণে প্রায় একশ মণের বেশি লবণ নষ্ট হয়ে গেছে। সারবাং এর প্রত্যেক লবণ চাষীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে তাদের জমির লবণ নষ্ট হওয়া ছাড়াও বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে অন্যত্র চলে গেছে।
লবণ চাষি জলিল আহম্মেদ বলেন, মাঠে ১৮০০ মণ লবণ ছিল। তার মধ্যে ৩০০ মণ লবণ নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠে প্রত্যেক লবণ চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিসিকের কোনো কর্মকর্তা এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
সাবরাং লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমাইন কবির বলেন, মাঠে চাষিদের লবণ ছিল। প্রত্যেক লবণ চাষি ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন। প্রত্যেক লবণ চাষিদের অন্তত পাঁচভাগের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, সাবরাং ইউনিয়নে ২৫ হাজার একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বাতাস ও বৃষ্টির কারণে লবণ চাষিদের লবণ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক লবণ চাষি ব্যাংক ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে লবণ চাষ করে থাকেন। বাজারে দাম নিয়েও চাষীরা সন্তুষ্ট নন। যার কারণে যে পরিমান লবণ নষ্ট হয়েছে তাতে কৃষকের ক্ষতি অন্য কেউ পুষিয়ে দিতে পারবে না।
এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক বাড়িঘর, কৃষক ও লবণ চাষিদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী পরবর্তীতে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
কক্সবাজারে বিসিকের লবণ উৎপাদন কেন্দ্রের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জাফর ইবাল ভূঁইয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রভাবে কোন ধরণের লবণ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। লবণের মাঠে পানিও প্রবেশ করেনি। লবণ চাষিদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা থাকে, সেইগুলা পাওয়ার জন্য অনেক লবণ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করে থাকতে পারেন। যদি আসলেই কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হন তাহলে আমরা সেটা তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবো বলে জানান এই কর্মকর্তা।