প্রায় চার ঘন্টা ছাব্বিশ মিনিট পর নিহত চালক মিনিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে বাস মালিক সমিতি ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি নাজিরহাট আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিল বিক্ষুব্ধ শত শত জনতা। বৃহস্পতিবার (২৭জুন) দুপুর একটা থেকে বিকাল চারটা ২৬মিনিট পর্যন্ত এসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। একদিকে যাত্রীদের ভোগান্তি অপরদিকে পথচারী স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে। এ চার ঘন্টা পর্যন্ত যানবাহন বন্ধ থাকলেও গাড়ি ভাঙচুর সহ অপ্রীতিকর কোন ঘটনায় জড়াইনি স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের একটাই দাবি ছিল বেপরোয়া গতির শান্তি পরিবহনের একটি বাস দুর্ঘটনায় আহত ড্রাম চালক মানিক নিহত হওয়ায় বাস মালিকের পক্ষ থেকে চিকিৎসা বাবদে কোনো সহযোগিতা না করায় ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছিল।
সরেজমিনে দুপুর দেড়টা এগিয়ে দেখা যায়, শত শত স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করে দুই দিক থেকে আসা যানবাহন গুলো বন্ধ করে দেয়। তবে জরুরী খাদ্য রপ্তানি যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি কর্মকর্তাদের যানবাহন গুলো ছেড়ে দেয়। সড়ক অবরোধকারী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়,নাজিরহাট খাগড়াছড়ি এই সড়কে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে। হাজার হাজার জনতার দাবি ছিল এ সড়কটি প্রশস্ত করে ডিভাইডার দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ করতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে বারবার এ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানান। গত শনিবার শান্তি পরিবহনের একটি বাস সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সরকার হাট বাজারে বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্কিংয়ে থাকা একটি চাঁদের গাড়ি তিনটি ড্রাম ট্রাককে সজোরে ধাক্কা দেয়। দুটি টং দোকান ভেঙে যায়। গাড়িগুলো দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। এতে ড্রাম চালক মানিক গুরুতর আহত হলে নগরের একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করেন।
সড়ক অবরোধকালে থানার একটি পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে জনসাধারণকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করেন। কিন্তু প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ জনপ্রতিনিধির কোন সদস্যের কাউকে দেখা যায়নি। প্রায় চার ঘন্টা পর হাটহাজারী মডেল থানার ওসি, নাজিরহাট হাইওয়ে পুলিশের ওসি তাদের সঙ্গে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে জনপ্রতিনিধি মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান,গুমান মর্দন ইউপি চেয়ারম্যান অবরোধকারী বিক্ষুব্ধ জনতার সাথে কথা বলে বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে এই অবরোধ তুলে নেন। অবরোধকারীরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ আদায় না করলে আবারো কঠোর আন্দোলনের হুমকি প্রদান করেন। এ সময় বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৪ ঘন্টা ২৬ মিনিট পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। চরম ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে শতশত যাত্রী সাধারণ।
এ বিষয়ে হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা দুর্ঘটনা কবলিত বাসের মালিকের সাথে বাস মালিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় যোগাযোগ করে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে। যার কারণে দ্রুত এটি সমাধান করে অবরোধকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক করে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২২ জুন) সকাল ৭টার দিকে খাগড়াছড়িগামী শান্তি পরিবহনের একটি বাস ওভারটেক করতে গিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ৩/৪টি গাড়ি কে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। এ ঘটনায় ঘাতক বাসটি জব্দ করলেও চালক পালিয়ে যায় বলে জানান নাজিরহাট হাইওয়ে পুলিশের এসআই আনিস।