চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিনকে ঘিরে আদালত প্রাঙ্গনে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। এতে আসামিদের মধ্যে ৭০ জন আইনজীবী ও দুজন সাংবাদিকও রয়েছেন। ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগে তিনটিসহ মোট চারটি মামলা দায়ের হল।
সংঘর্ষের মধ্যে নির্মম হত্যার শিকার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ জানিয়েছেন, মামলার এজাহারে ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করি বলেন, হত্যার শিকার সাইফুলের ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছেন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়।
আদালত ভবনের মূল প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হলের সামনের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া নগরীর কোতোয়ালীর মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়।
মামলার আসামিদের অন্যতম চট্টগ্রাম আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মহানগর পূজা পরিষদের সাবেক সভাপতি চন্দন কুমার তালুকদার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিতাই প্রসাদ ঘোষ, মহানগর পূজা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী নিখিল কুমার নাথ, আইনজীবী চন্দন দাশ, রুবেল পাল, সুমন আচার্য্য, আশীর্বাদ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
সাংবাদিকের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ ও দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন–এর উপদেষ্টা সম্পাদক আয়ান শর্মা।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় আসামিরা আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা চালান। হামলায় ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন আসামি আইনজীবীরা। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিখিল কুমার নাথ বলেন, ‘সাইফুল আমাদের সহকর্মী ও ভাই। তাঁকে যারা হত্যা করেছে, অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১১৬ আসামির মধ্যে ৭০ জনের মতো আইনজীবী রয়েছেন। তাঁরা সবাই সনাতনী আইনজীবীদের সংগঠন আইনজীবী বিজয়া সম্মিলন পরিষদের সদস্য। ঘটনার দিন হামলা কিংবা গাড়ি ভাঙচুরে আইনজীবীদের কেউ জড়িত ছিলেন না।
কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন সকাল ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা।
প্রায় ৩ ঘণ্টা আটকে থাকার পর একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পুলিশের ১০ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়।