প্রতিদিনের মতই সকালটি শুরু হয়েছিল ট্রাফিক পুলিশ কনস্টবল মো. মনিরুল ইসলামের। সকাল বেলায় সকলের কাছ থেকে ডিউটি করার জন্য বিদায় নিয়েছিলেন হাসিমুখে। কিন্তু প্রিয়জনের কাছে ফেরত গেলেন সাদা কাফনে করে সহকর্মীদের কাধে চড়ে। সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে জীবন দিলেন আরেক অকুতোভয় সৈনিক। অপরকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন।
গত ৪ ডিসেম্বর শনিবার খুলশী থানাধীন ঝাউতলায় ডেমু ট্রেন, বাস এবং সিএনজি অটোরিক্সার ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ৩ জন নিহত ও ৮ জন আহত হয়েছে ।নিহতরা হলেন ১)পুলিশ কনস্টবল মনিরুল ইসলাম ২)প্রকৌশলী সৈয়দ বাহাউদ্দীন ৩) এইচ এস সি পরিক্ষার্থী সফরাজ উদ্দিন। পুলিশ কনস্টবল মনিরুল ইসলাম এই সময় সিএনজি অটোরিক্সাকে দুর্ঘটনার হাত হতে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গিয়ে প্রাণ হারান। তিনি চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কর্মরতছ ছিলেন ।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভির তার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান, এক শোক বার্তায় সিএমপি কমিশনার কর্তব্যরত অবস্হায় নিহত মো. মনিরুল ইসলাম এর সততা, দক্ষতা ও কর্তব্য নিষ্ঠার কথা স্মরণ করেন এবং তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশে যুক্ত হল আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম তিনি হলেন মনিরুল ইসলাম । যিনি পুলিশের কর্তব্যকে সর্বাগ্রে রেখে নিজের জীবনকে হাসিমুখে বিলিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ তার এ ত্যাগ, ভালবাসা এবং কর্তব্যনিষ্ঠা চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
পুলিশ কনস্টবল মনিরুল ইসলাম ২০১৩ সালের ১৭ ই জুন সিএমপিতে যোগ দেওয়ার পর বেশ কিছু সময় দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রাম আদালতে । সেখানে কোর্ট লক -আপে দায়িত্ব পালন করতেন।দায়িত্ব পালন কালে আইনজীবী ও আসামীদের সাথে অমায়িক ব্যবহার করতেন আসামিদের মনে কষ্ট আসে মত কোন দিন কোন কথা বলতেন না। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট এস এম আরমান উদ্দিন বলেন," কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম ছিলেন অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ তার আচার- আচরণ ছিল অতি বিনয়ী। তিনি আইনজীবী, এমনকি আসামিদের সাথেও খুব ভালো ব্যবহার করতেন , মহান আল্লাহ তাকে যেন বেহেস্ত নসিব করেন। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সদস্য এডভোকেট সাজ্জাদ কামরুল বলেন, পুলিশ সদস্য মনিরুল ভাই ছিলেন খুব ভালো মানুষ তার মত আর মানুষ হয় না তিনি আইনজীবীদের দেখতে পারতেন আসামিদের সাথেও খুব ভালো আচরণ করতেন । সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট ফয়েজুর রহমান চৌধুরী বলেন, মনিরুল ইসলাম ভাই ছিলেন একজন বিনয়ী ও সাদা মনের মানুষ তার মত লোক পুলিশ বিভাগে অতি প্রয়োজন।
এদিকে খুলশীর ঝাউতলায় দূর্ঘটনার ঘটনায় রেলওয়ে ও পুলিশ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। রেলওয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরী বলেন, খুলশীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা হলেন , চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল গফুর, সহকারী পুলিশ সুপার ( সদর) ও রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীন। রেলওয়ে থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে সদস্য সংখ্যা ৫ জন তারা হলেন,১) সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) মনিরুজ্জামান( তদন্ত কমিটি প্রধান) ২) এসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট ( এসি) সত্যজিৎ দাশ ৩) সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফারুক হোসেন ৪) সহকারী যান্ত্রিক বজলুল রহমান ও ৫) রেলওয়ে হাসপাতালের একজন ডাক্তার।
ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত কনস্টবল মো. মনিরুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি সুদীর্ঘ ২৫ বছর অত্যন্ত সুনামের সাথে চাকরি জীবন শেষ করে গত ৪ ডিসেম্বর শনিবার কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সেলিনা আক্তার, দুই মেয়ে মাহমুদা,বিবি ফাতিমা ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছেলে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার নিজ বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খোয়াজপুর গ্রামে। কর্মময় জীবনে তিনি ৪৯ টির মত পুরস্কার লাভ করেন।