“সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ” (এমভিডিএ) বাংলাদেশে ও ম্যালেরিয়া নির্মূলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি স্বাস্থ্য গবেষণা বিষয়ক"অবহিতকরণ ও প্রেস ব্রিফিং"সোমবার ০১ এপ্রিল লামা উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন,কো-অর্ডিনেটর,MVDA
ডাঃ জেসমিন আক্তার,মেডিকেল অফিসার (ডিজিজেস কন্ট্রোল), লামা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন
ডাঃ এম এম নয়ন সালাউদ্দিন
ডেপুটি সিভিল সার্জন, বান্দরবান। গবেষণা বিষয়ক উপস্থাপনায়
অধ্যাপক মো: আবুল ফয়েজ, সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। উম্মুক্ত আলোচনায় তিনি জানান,ম্যালেরিয়া নির্মূলে গবেষণা (এমভিডিএ); “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ" বাংলাদেশ এর গবেষণা দলের উদ্যোগে আয়োজিত আজকের অবহিতকরণ সভায় উপস্থিত সকলকে স্বাগতম। প্রকৃতি ও জীবন একসাথে মিশে আছে লামা উপজেলায়। এখানকার এই সহ-অবস্থানে বড় বাঁধা ম্যালেরিয়া। যা জীবন-জীবিকা থামিয়ে দেয়। আপনারা সবাই
অবগত আছেন যে, সারাদেশের মধ্যে পার্বত্য তিন জেলায় (বিশেষ করে বান্দরবান জেলায়) ম্যালেরিয়া সংক্রমণ
সবচেয়ে বেশি। সরকার পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সাল নাগাদ ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ম্যালেরিয়াবাহী মশার কামড় ও ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার জন্য বর্তমানে কীটনাশকযুক্ত মশারী ব্যবহার, দ্রুত ম্যালেরিয়া
রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা নেয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদানের মতো
কার্যক্রম চলছে। এই চলমান সেবা দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।বিজ্ঞানিদের মতে,
ম্যালেরিয়া নির্মূলে চলমান সেবার পাশাপাশি সবার জন্য ম্যালেরিয়ার টিকা এবং ঔষধ প্রয়োগ হতে পারে যুগোপযোগী পদক্ষেপ। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করতে,
ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য নতুন টিকার কার্যকারিতা নিয়ে “সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ" প্রয়োগে ম্যালেরিয়া
সংক্রমণ প্রতিরোধের কার্যকারিতা যাচাই করা" নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এই গবেষণায়, ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ থেকে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত দ্যা আর টুয়েন্টি ওয়ান ম্যাট্রিক্স-এম ম্যালেরিয়া ভ্যাক্সিন (The R21/ Matrix M Malaria
Vaccine) প্রয়োগ করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কর্তৃক অনুমোদিত এই টিকার ইতোমধ্যেই ৭৭% উচ্চ
কার্যক্ষমতা বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি ম্যালেরিয়ার জন্য উদ্ভাবিত ২য় টিকা এবং এটি উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম
ইনস্টিটিউট।পার্বত্য অঞ্চলসহ, সমগ্র দেশ থেকে ম্যালেরিয়াকে বিদায় করতে টিকার কার্যকারিতা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এ গবেষণায় কমিউনিটি সম্পৃক্ততার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম রয়েছে। গবেষণাটি বাস্তবায়নের জন্য বান্দরবান জেলার লামা
এবং আলীকদম উপজেলার ১০০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নির্বাচিত করা হবে এবং এই ১০০টি গ্রামের ১০
হাজার মানুষকে দৈবচয়নের মাধ্যমে সমানভাবে মোট চারটি ক্লাস্টার বা গ্রুপে ভাগ করা হবে।নির্বাচিত এসব গ্রামে বসবাসরত ৬ মাসের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী মহিলা কিংবা এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণের
পরিকল্পনা করছেন এমন কেউ, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা, ম্যালেরিয়ার অন্য টিকা গ্রহণ করেছেন কিংবা
ম্যালেরিয়ার অন্য কোন গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হিসেবে টিকা পাচ্ছেন এমন কেউ, চিকিৎসা প্রয়োজন এমন মারাত্মক অসুস্থ
কেউ, গবেষণার ঔষধ/টিকার পূর্ববর্তী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস আছে এরকম কেউ ব্যতীত বাকী সকলেই সম্মতি
প্রদান সাপেক্ষে এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত বিশ্বমানের (GCP অনুসরণে) এই
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরবরাহকৃত ম্যালেরিয়ার টিকা, ঔষধ ও চলমান সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা
হবে এবং একই সাথে অংশগ্রহণকারীদের যথাযথ সম্মানী দেয়া হবে। অংশ নেয়া সকলেই গবেষণা চলাকালীন যে কোন
স্বাস্থ্য সমস্যায় স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ ও সহায়তা পাবেন।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী (কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল- সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ
মন্ত্রণালয়) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই গবেষণায় ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, মাহিদল - অক্সফোর্ড রিসার্চ ইউনিট,
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড ও জেনার ইনস্টিটিউট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য ও সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন
অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ - সিআইপিআরবি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, বিআইটিআইডি ও ব্র্যাক সম্পৃক্ত রয়েছে।