রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে অতিষ্ট হয়ে প্রাণরক্ষায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ১৭৭ সেনা সদস্যকে ১১ বর্ডার গার্ড বিজিবির ব্যাটালিয়ন সংলগ্ন বর্ডার গার্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ে রাখা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে এদেরকে অত্র স্কুলে আশ্রয় দেয়া হয়।
স্কুলের বেঞ্চ সরিয়ে মিয়ানমার সদস্যদের
বিছানা সাজানো হয়। অসুস্থদের সেবা দেয়া হচ্ছে। এদের বিষয়ে মিয়ানমারকে অবহিতরতরা হয়েছে বলে ও সূত্র নিশ্চিত
করেন। তবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত সোমবার (১১ মার্চ) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপির মোট ১৭৯ জন সদস্য
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করে। পরে বিজিপি সদস্যদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে ২৯ জনকে দুপুরে ১৭৭জনকে রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বিজিবি স্কুলে আশ্রয় দেয়া হয়।
সুত্র আরো জানান,দু'দেশের মধ্যবর্তী শূণ্যরেখা পার হয়ে বাংলাদেশে
আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যের মধ্যে ২ দু'ভাষীকে মঙ্গলবার জামছড়ি সীমান্ত দিযে পুশব্যাক করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধসহ আহত ৪ জনকে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন প্রশাসন।
এছাড়া অন্যান্যদেরকে খাদ্যসহ মানবিক
সহায়তা দিচ্ছে বিজিবি।
স্থানীয়রা জানান, ৪৬ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকার জামছড়ি দিয়ে সোমবার সকালে ২৯ জন বিজিপি সদস্য প্রবেশ করে। তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছিলো। পরে সন্ধ্যার সময় নতুন করে আরো ১৫০ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
অন্যদিকে সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার সাবের আহামেদ আহত হন । তাকে উন্নত চিকিৎসার দিতে কক্সবাজার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শহরের একটি প্রাইভেট হসপিটালে অস্ত্রোপচার (অপারেশন) মাধ্যমে কোমরে আঘাত করা বুলেটটি বের করা হয়েছে রাত দুটার সময়। বিষয়টি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন,মেম্বার পরিবারের সদস্যরা। অপর দিকে মঙ্গলবার সকাল ৬ টার দিকে ৪৫ ও ৪৭ নম্বর পিলার এলাকা দিয়ে ১৫ রাউন্ড গোলাগুলির শব্দ শুনেন জামছড়ি এলাকার মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা।
সোমবার (১১ মার্চ) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিজিপির ১৭৭জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, গতকাল সকালে ২৯ জন ও রাতে ১৪৮ জন মিলে সর্বমোট ১৭৭ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ রাখা হয়েছে। বর্তমানে পরিচয় সনাক্তকরণ কাজ চলছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্বান্ত মোতাবেক কার্যক্রম চলবে।
প্রশাসনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা
না প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন,সম্প্রতি রমজানে স্কুল বন্ধ রাখা নিয়ে হাইকোর্টের স্থাগিতাদেশের বিষয় আপিল বিভাগে স্কুল খোলার বিষয়ে দিদ্ধান্ত দেন। এতে প্রাথমিক রমজানের প্রথম ১০ দিন খোলা রাখতে হবে।
এখন এ পর্যায়ে বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৭৭ মিয়ানমার বিজিবি সদস্যকে
অন্যত্র সরানোর বিষয়টি নিয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ ভেবে সিদ্ধান্ত দিবেন। নচেৎ অত্র স্কুলের ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ (বিজিপি) ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিলো।