বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনন্য ভুমিকায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দেশ পুনরায় স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে সড়কের শৃঙ্খলায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে পৌরশহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে যানজট নিরসনের জন্য কাজ করতে দেখা গেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। প্রচণ্ড গরমে সড়কে অবস্থান নিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। কারো হাতে লাঠি, কারো মুখে বাঁশি। ট্রাফিক পুলিশের মতো ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। তবে এ সময় রাস্তায় পুলিশ প্রশাসনকে দেখা না গেলেও মহাসড়কে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দৃশ্যমান ছিল।
চকরিয়া পৌরশহরে যানজট নিরসনে শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের দু'পাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পরপর রাস্তার মোড়ে স্বল্প আকারের যানজট সৃষ্টি হলেই সেখানে দ্রুত উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থী এই যানজট নিপুণ দক্ষতায় নিরসন করে যাচ্ছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরশহরের থানা রাস্তার মোড, সরকারি হাসপাতাল সড়কের মাথায়, চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার মাথা, ওয়াপদা রোড়ের মাথা, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাথা, জনতা টাওয়ারের মোড়, বায়তুশ শরফ রোড়ের মাথা, বাঁশঘাটা রোড়ের মাথায় শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সড়কে যানজটের শৃঙ্খলা ফেরাতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী এই দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চকরিয়া উপজেলার সমন্বয়ক শিক্ষার্থী সাঈদ হাসানের কাছে চাইলে তিনি বলেন, দেশ থেকে অন্যায়, অপরাধ ও জুলুমবাজদের বিদায় করেছে ছাত্র-জনতা। সেই সঙ্গে আমাদের যুক্তিক ও ন্যায্য অধিকার আদায় করে নিয়েছি। দাবী আদায় করতে গিয়ে সহিংসতায় সারা দেশে আমরা অনেক ভাইদেরকে হারিয়েছি। দেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে শহরে কোনো ধরণের ট্রাফিক পুলিশ নেই। এ অবস্থায় শহরবাসীকে যানজটমুক্ত করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্ববোধ থেকে আমরা সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে নেমেছি। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে না আসা পর্যন্ত আমরা এ কাজ চালিয়ে যাব।
রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা চকরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী খালেদ হোসেন সায়েম জানান, তিনি স্বেচ্ছায়, আনন্দে ট্রাফিক পুলিশিংয়ের কাজ করছেন। তার আরও কিছু সহপাঠী রয়েছে যারা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে এই কাজে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি এটা নিশ্চিত করতে চান সড়কে যেন আর কোনো ধরনের চাঁদাবাজি না হয়। দেশ যত দিন ঠিক হচ্ছে না, আমরা আমাদের এই সেবা চালিয়ে যাব।
সড়কের পথচারী আবদুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে দেশটি নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। এ স্বাধীনতার জন্য আমরা খুবই খুশি। দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে যানজট নিরসন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে যে ভাবে কাজ করছে সত্যি এটা দেখে নিজেকে গর্ববোধের পাশাপাশি বেশি ভালো লাগছে। নতুন উদ্যোগে নতুন উদ্যমে দেশটি এগিয়ে যাক। সেটাই প্রত্যশা রাখি।
রিক্সাচালক নুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে যে ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা দেখে খুব ভালো লাগছে। মনে হলো দেশটা নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। যাদের ত্যাগের কারণে দেশ আজ স্বাধীন হলো তারা আবার ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে দেখে আনন্দিত হলাম।