কলঙ্কিত ইতিহাসের অংশ হয়ে শেষ হলো কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে। এতে সফুর আলম (৩৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে ভোটগ্রহণ চলাকালে সহিংসতার এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সফুর আলম পশ্চিম পোকখালীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মালমুরাপাড়ার মৃত নমিউদ্দিনের ছেলে। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন। প্রার্থী শামসুল আলমের আত্মীয় তিনি। তবে টেলিফোন প্রতীকের সমর্থকদের দাবি, সফুর আলম তাদের কর্মী।
সকাল ৮টায় শুরুর পর কয়েক ঘণ্টা সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পোকখালী, জালালাবাদ, ঈদগাঁওয়ের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেন প্রভাবশালী এক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। এমন খবর পেয়ে মধ্যম পোকখালী কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী শামসুল আলম।
পরে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেবের পক্ষে প্রভাব বিস্তার ও বহিরাগত লোকজন কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে নিজের এজেন্ট বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আকবর। এসময় কয়েকশ কর্মী-সমর্থক তার সঙ্গে সড়কে অবস্থান নেন। ফলে ঘণ্টাখানেক সময় মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে অবরোধকারীদের তুলে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর পশ্চিম পোকখালী মালমুরাপাড়া এলাকার কেন্দ্রে সহিংসতা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্থানীয় মৌলভী মুহাম্মদ আলম নামের একজনের নেতৃত্বে সফুর আলমের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পোকখালী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আজম খান জানান, নির্বাচনী সহিংসতায় অন্য প্রার্থীর লোকজন বাড়িতে হামলা চালান। এসময় লুটপাট করা হয়। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সফুর আলমকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রে টেলিফোন ও মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে টেলিফোন প্রতীকের কর্মী ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকশ লোক দরগাহপাড়া এলাকায় গিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের বসতবাড়িতে হামলা চালান। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হামলায় ভাদিতলার ইলিয়াসের ছেলে হেলাল উদ্দিন আহত হন। এসময় বেশ কয়েকজন নারীও আহত হন বলে জানা গেছে।
নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ে জানতে ঈদগাঁও, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের কর্মকর্তা দেবজিত বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনা কেন্দ্রের বাইরের। আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি।
এ বিষয়ে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, এটি কেন্দ্রের বাইরে। বাকি সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে কেউ অবহিত করেননি।
ঈদগাঁও, ইসলামপুর, পোকখালী, ইসলামাবাদ ও জালালাবাদ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৬০। যেখানে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৪৮ ও মহিলা ভোটার ৪০ হাজার ২১২ জন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।