আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইসলামী সংস্কৃতির মূল্যবোধ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি | প্রকাশের সময় : রবিবার ৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:১৬:০০ পূর্বাহ্ন | ধর্ম

মানুষের জীবনযাত্রার রূপ ও পদ্ধতির নাম সংস্কৃতি। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর চিন্তাভাবনা, ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার-আচরণ, পোশাক -পরিচ্ছদ, পানাহার, চলাফেরা, খেলাধুলা, বিনোদন, ভাষা ও সাহিত্য চর্চা ইত্যাদির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় সংস্কৃতি। এক কথায় সংস্কৃতি মানে মানব জীবনের পথ বা চলার পদ্ধতি। সংস্কৃতি মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সুশৃঙ্খল সমাজ গঠন ও নির্মল শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুস্থ সংস্কৃতি অতি জরুরি বিষয়। আদর্শ সংস্কৃতি একটি জাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে উপনীত করতে পারে। পক্ষান্তরে অপসংস্কৃতি ঠেলে দিতে পারে ভয়াবহ পরিণতির দিকে। যা মানুষের সুস্থ পরিবেশ বিধ্বস্ত করে এবং সুপ্ত প্রতিভা বিকৃত করে, তা-ই হচ্ছে অপসংস্কৃতি। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) একটি জাহেলি বর্বর জাতিকে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে উদ্ধার করেছিলেন। যে সমাজ ইসলামী সংস্কৃতি অনুসরণ করবে তা বরাবরই শান্তি-শৃঙ্খলার উদাহরণ হয়ে থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সেই অনুদানের কথা স্মরণ কর যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন, তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, এরপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে তোমরা এখন তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা তো অগ্নিকাণ্ডের প্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৩)

ইসলাম পৃথিবীতে নিছক রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধনের জন্যই আসেনি। ইসলাম এসেছে মানুষের চিন্তা-চেতনা, মননশীলতা, আচার-আচরণ ও যাবতীয় কাজকর্ম পরিশুদ্ধ করার জন্য। আর এটাই প্রকৃত সাংস্কৃতিক বিপ্লব। পরিপূর্ণভাবে ইসলামী সংস্কৃতি অবলম্বন মানেই ইসলামকে পূর্ণাঙ্গভাবে আঁকড়িয়ে ধরা। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।’ (সুরা আল বাকারাহ, আয়াত ২০৮) ইসলামী সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য মানুষের চূড়ান্ত সাফল্যের পথ প্রদর্শন, সমাজে সততা ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা। মহান প্রভু এবং তাঁর রসুলের (সা.) অধিকার ও মানুষের যথাযথ মর্যাদা সমুন্নত করা। এ সংস্কৃতি সব মানব জাতিকে ইহ ও পরকালের মুক্তি দিতে পারে। উদ্ধার করতে পারে অশান্তির দাবানল থেকে। বিকৃত সংস্কৃতির আরেক নাম অপসংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতি যেভাবে উন্নতির পথ দেখাতে পারে, আদর্শের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সুসংহত করতে পারে, আলোর দিশা দিতে পারে; তেমনি অপসংস্কৃতি মানুষকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই সংস্কৃতি যদি মানবতা ও নৈতিকতা বিবর্জিত হয় এবং ধর্মীয় নীতির অনুকূলে না হয়, কোনো মুসলমান তা অনুসরণ করতে পারে না। প্রতিটি মুসলমানের শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি হবে ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে। কোরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত কোনো সংস্কৃতিকে ইসলামী সংস্কৃতি বলা যাবে না। ইসলামের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে মানুষ তার আচার-ব্যবহার, দেহ, মন ও আত্মাকে যেভাবে সংস্কার ও সংশোধন করে, এটাই ইসলামী সংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতির মূল ভিত্তি কোরআন-সুন্নাহ। অতএব, কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী যা কিছু হয় সবই মুসলমানদের জন্য অপসংস্কৃতি। খোদাপ্রদত্ত আদর্শ চর্চা করাই সর্বোত্তম সাংস্কৃতিক মননশীলতা। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং অপেক্ষা অধিক উত্তম রঙিন কে? আর আমরা তাঁরই ইবাদতকারী।; (সুরা আল বাকারাহ, আয়াত ১৩৮)

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা