আল্লাহ বান্দার দোয়া, প্রার্থনা ও আহ্বানে সাড়া দেন। এ জন্য আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম ‘মুজিব’ (সাড়া দানকারী)। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহর এই গুণের বিবরণ এসেছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে নিষ্ঠ কোনো নর বা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক নিকটবর্তী ও সাড়া দানকারী।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৬১)
মোনাজাত কবুল হওয়ার জন্য কিছু আদব ও শর্ত রয়েছে। যেগুলো খেয়াল না করলে আমাদের মোনাজাত হয়তো কিছু প্রার্থনা-বাক্য হিসেবেই থেকে যাবে। আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হওয়ার মতো মোনাজাত কখনোই হবে না। তাই কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-শুরুতে দুনিয়াবি সব চিন্তা থেকে নিজেকে খালি করে পবিত্র মনে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা।
দুই হাত তুলে প্রথমেই আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা ও নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া। এ ক্ষেত্রে দরুদে ইব্রাহিম পড়াই উত্তম। নিজের সব গুনাহ আল্লাহর কাছে স্বীকার করা এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব বর্ণনা করা-প্রথমে মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ও সব মুসলমানের জন্য ব্যাপকভাবে দোয়া করা। তারপর নিজের প্রয়োজন অত্যন্ত কাকুতিমিনতির সঙ্গে আল্লাহর কাছে তুলে ধরা। আল্লাহ তায়ালাকে তাঁর শ্রেষ্ঠ নামগুলো ধরে ডাকা। যেমন-রহমান, রাহিম, গাফুর, শাকুর। নিজের দোয়া কবুলের জন্যও দোয়া করা। সর্বশেষ ‘আমিন’ বলে এবং নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়ে মোনাজাত সম্পন্ন করা।
মোনাজাতের জন্য নির্ধারিত কোনো সময় না থাকলেও কিছু কিছু সময় মোনাজাত করা উত্তম। কারণ তখন কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন-আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়। এটি একটি দোয়া কবুলের বিশেষ সময়।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না’ (আবু দাউদ : ৫২১)। সেজদায় থাকা অবস্থায়ও দোয়া কবুল হয়। এটি দোয়া কবুলের উত্তম সময়। কারণ এই সময় বান্দা আল্লাহ তায়ালার অতি নিকটে থাকে।
নবী (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকে সেজদার সময়। সুতরাং তখন তোমরা বেশি বেশি দোয়া কোরো’ (মুসলিম : ৪৮২)।
রাতের মধ্যভাগে এবং রাতের শেষাংশের দোয়া আল্লাহ তায়ালার অনেক প্রিয়। কারণ তখন আকাশ থেকে আহ্বান করা হয়-‘আছে কি কোনো প্রার্থনাকারী, যার প্রার্থনা কবুল করা হবে! আছে কি কোনো প্রয়োজনগ্রস্ত, যার প্রায়োজন পূর্ণ করা হবে! আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত, যার বিপদ দূর করা হবে!’ এভাবে আহ্বান করা হয় ফজর পর্যন্ত। তখন কোনো মুসলিম ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন’ (ইবনে মাজাহ : ১৩৮৮)।
জুমার দিন ইমাম সাহেব মিম্বারে বসার পর থেকে নামাজে দাঁড়ানো পর্যন্ত সময় এবং আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়গুলোতে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা খুবই বেশি।