বান্দরবানের আলীকদমে পর্যায়ক্রমে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।সারা দেশের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় মধ্যে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগের সংক্রমণের হার বেশি। বিশেষ করে বান্দরবান জেলায় ম্যালেরিয়া সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এজন্য ম্যালেরিয়া নিয়ে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় গবেষণা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক মো. আবুল ফয়েজ।
আজ সোমবার (১এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭ ঘটিকার সময় নয়াপাড়া ইউনিয়নে রূপমুহুরী রিসোর্টে এর হল রুমের সভা কক্ষে আয়োজিত ‘ম্যালেরিয়া নির্মূলে গবেষণা (এমবিডিএ): সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ওষুধ’ শীর্ষক অবহিতকরণ ও প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান সিভিল সার্জন বান্দরবান এর সভাপতিত্বে ও আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পরিচালক ডাঃ মোঃ মাহতাব উদ্দিন এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মোঃ আবুল ফয়েজ, সাবেক মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রধান গবেষক এবং স্হানীয় সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক মো. আবুল ফয়েজ জানান, চলমান সেবার মধ্যে থাকবে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য কীটনাশকযুক্ত মশারি এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া থাকবে বাড়ির কাছের স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে দ্রুত ম্যালেরিয়া নির্ণয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়া।
অধ্যাপক মো. আবুল ফয়েজ জানান, ম্যালেরিয়া নির্মূলে চলমান সেবার পাশাপাশি সবার জন্য ‘ম্যালেরিয়ার টিকা এবং ওষুধ’ প্রয়োগ হতে পারে যুগোপযোগী পদক্ষেপ। সে লক্ষ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলে নতুন টিকার কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ গবেষণায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত টিকা ব্যবহার করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত এ টিকা এরই মধ্যে ৭৭ শতাংশ উচ্চ কার্যক্ষমতা আছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি ম্যালেরিয়ার জন্য উদ্ভাবিত দ্বিতীয় টিকা। এটি উৎপাদন করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। ওষুধ হিসেবে ডিএইচএ পাইরাকুইন ব্যবহার করা হবে।
তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১০০টি মহল্লার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নির্বাচিত করা হবে। পরে দৈবচয়নের মাধ্যমে সমানভাবে চারটি ক্লাস্টার বা গ্রুপে ভাগ করা হবে। প্রথম গ্রুপে ২৫টি মহল্লার সবার জন্য ম্যালেরিয়ার টিকা এবং ওষুধ উভয়ই প্রদান করা হবে।
অধ্যাপক মো. আবুল ফয়েজ জানান, গবেষণায় জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি, সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ব্র্যাক, সিআইপিআরবি, মাহিদল অক্সফোর্ড রিসার্চ ইউনিট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড ও জেনার ইনস্টিটিউট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য সম্পৃক্ত রয়েছে।
উল্লেখ্য যে আলীকদম উপজেলায় বিগত ২০২২ সালে ৪০২৩ জন ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং ২০২৩ সালে এসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৩৫ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান যায় ।