বয়োবৃদ্ধ আমেরিকা প্রবাসীর নাম ব্যবহার করে কোম্পানী গঠন, ব্যাংক হতে কোটি কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ, ফ্ল্যাট বিক্রয় করে বিভিন্ন লোকদের নিকট হতে অর্থ আত্মসাতের মামলায় সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স কোম্পানির এমডি মোঃ মোমেনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) আসামী মোঃ মোমেন (৪৭) আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম এ আদেশ দেন।
আসামী মোঃ মোমেন চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর চাঁন্দের গো বাড়ির মৃত আবদুল বাতেনের পুত্র।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল নূর জানান, সন্দ্বীপ উপজেলার ইয়াছিন সুকানির বাড়ির মৃত মোহাম্মদ ইয়াছিন মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ বাবুল মিয়ার (৬৭ বছর) দায়ের করা প্রতারণা মামলায় পিবিআই’র তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে এই আসামীসহ ১৪ আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আসামী ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মোমেন আজ আদালতে আত্মসমর্পন করলে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অপর আসামীরা হলেন-সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামের আবুল খায়েরের পুত্র মোঃ আরাফাত (৪০), বর্তমানে হালিশহর আনন্দধারা আবাসিকে বসবাস করে, মাস্টার শফিক উদ্দিনের পুত্র শিহাব উদ্দিন (৪৩), মোহাম্মদ ইসার পুত্র মোহাম্মদ নাজমুস সাকিব (৪০), মৃত ইয়াছিনের পুত্র মাহবুবুর রহমান (৪৫), এ এস এম সুফিয়ানের পুত্র এএসএম রফিকুল ইসলাম (৪১), এসএম সাইফুল ইসলাম (৩৯), ইকরামুল কবিরের পুত্র মোহাররামুল কবির (৪৯), গোপাল চন্দ্র রায়ের পুত্র পিযুষ চন্দ্র রায় (৪০), জাহিদুল ইসলামের কণ্যা সুরাইয়া বেগম (৬১), মৃত মোঃ ইমরান সওদাগরের পুত্র মোহাম্মদ শাহজাহান (৮০), আবুল খায়েরের কণ্যা জেসমিন মান্নান (৫১), মোহাম্মদ শামসুল আলমের পুত্র শাহরিয়ার মাহমুদ (৩৯) ও রবিউল আলমের পুত্র রাশেদ হোছাইন (৩৫)।
মামলার সূত্রে জানা যায়, বাদী মোহাম্মদ বাবুল মিয়া দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করছেন। তার অনুপস্থিতিতে আসামীরা তার নাম ব্যবহার করে এই ভুয়া কোম্পানী ও বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট সৃজন করে বেশ কয়েকটি অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান হতে কোটি কোটি টাকা ঋন গ্রহন করে। আসামীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং জমিতে সুউচ্চ ইমারত নির্মাণের পরিকল্পনা করে ফ্ল্যাট বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিক্রয়ের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারন মানুষকে আকৃষ্ট করে। তারা প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। আসামীরা বাদীকে এই ভুয়া কোম্পানীর কখনো চেয়ারম্যান, কখনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়েছেন। আসামীরা ফ্ল্যাট ক্রয়কারীদের নিকট ফ্ল্যাটের দখল বুঝিয়ে না দেয়ায় এবং গৃহীত ঋণ পরিশোধ না করায় বাদী সহ আসামীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে মামলা দায়ের করে। জানা যায়, বাদী দেশে বেড়াতে আসলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি বিষয় জানতে পেরে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পিবিআই (মেট্রো), চট্টগ্রাম মামলার তদন্ত করে বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করে ৭০৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয়। জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফারমস এর বিভাগীয় অফিস এবং জুবিলি রোডের যমুনা ব্যাংকের কাগজপত্রসহ বাদীর টিপ ও সাক্ষর পরীক্ষা করে চট্টগ্রাম সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরির হস্তলিপি বিশারদের মতামতের প্রেক্ষিতে বাদীর ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামীরা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বাদীর সাক্ষর নিজেরা দিয়ে সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স লিমিটেড ডেভেলপার কোম্পানী গঠন, ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ, ফ্ল্যাট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোকদের নিকট হতে অর্থ আত্মসাত করেছে। এসব ঘটনায় বাদীর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।