বারবার আশ্বাস দিয়েও মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল না করায় নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। আজ সকাল থেকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রেন চলাচলে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি দায়িত্ব পালন করে আসা এই রেল কর্মীরা।
রানিং স্টাফরা অতিরিক্ত কাজ না করলে লোকবল সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা রেলওয়ের নির্ধারিত ট্রেন সূচি লণ্ডভণ্ড হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকেট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালনশেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। তবে রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ও কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে মাইলেজ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।
২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়। এছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন রানিং স্টাফরা।
মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকা, ধর্মঘটও পালন করেছেন এই রেল কর্মীরা। তবে রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ থেকে ফের কর্মঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, রেলওয়েতে রানিং স্টাফের পদ ২ হাজার ২০০ জন। কাজ করেন মাত্র ৯০০ জন। রানিং স্টাফরা অতিরিক্ত কাজ করেই ট্রেন চলাচল সচল রেখেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত কাজের মজুরি না পেলে একজন শ্রমিক কেনো কাজ করবেন? তাই রবিবার থেকে রানিং স্টাফরা নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রানিং স্টাফরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন না করলে রেলওয়ের নির্ধারিত ট্রেন সূচি লণ্ডভণ্ড হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে বড় ভোগান্তিতে পড়বেন যাত্রীরা।
মুজিবুর রহমান বলেন, মাইলেজ সুবিধা দিতে রেলওয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় দিচ্ছে না। আমাদের প্রশ্ন- তাহলে রেল কে চালায়? রানিং স্টাফদের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ই যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলছে।
ভোগান্তি এড়াতে রবিবার বিকল্প পথে যাত্রীদের যাতায়াতের পরামর্শ দেন রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।