বাংলাদেশ , শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১
খালী হয়ে গেছে অর্ধেক ভাড়াবাসা
অভাবে চট্টগ্রাম ছাড়ছে মানুষ
লেখক : দৈনিক সাঙ্গু | প্রকাশ: ২০২০-০৬-২১ ২০:২৫:৩১
মারুফা আক্তার:

করোনার প্রভাবে ব্যবস্যা-বাণিজ্যে মন্দা ও চাকরি হারানোয় চট্টগ্রাম শহর ছাড়ছে মানুষ। প্রতিদিন এই সংখ্যা বেড়েই চলছে। আর এ কারণে খালী হয়ে গেছে প্রায় অর্ধেক ভাড়াবাসা। গলিতে গলিতে শোভা পাচ্ছে টু-লেট/ভাড়া হবে লেখা সাইন বোর্ড।
নগরীর চকবাজার এলাকার এক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী আবদুল্লা আহিল (ছদ্মনাম) স্বপরিবারে নগর ছেড়েছেন। শাহআমানত সেতু এলাকায় কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে, তিনি জানান নগরীর পুলিশ প্লাজায় রেস্টুরেন্ট ছিল তার। পরিবার নিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলছিল। কিন্তু করোনায় সবই শেষ। বেচাকেনা না থাকায় দোকান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। হাতে নগদ যা ছিল বাসাভাড়া আর সংসার খরচে তাও শেষ। আর কোন পথ না থাকায় গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ায় চলে যাচ্ছিলেন তারা।
শুধু আবদুল্লা আহিল নয় নগরীর সিটি গেইট ও শাহআমানত ব্রীজের ওপর দাঁড়ালে চোখে পড়ে শত শত ট্রাকে মাল বোঝাই করে শহর ছাড়ছে মানুষ।
এদিকে বাড়ি খালী হতে থাকায় অনেক জমিদার পড়েছে চরম বিপাকে। নন্দন কাননের বাড়ি মালিক অবিরেন্দ ঘোষ জানান, বাসাভাড়া দিয়ে তাদের সংসার চলে আট ফ্লাটের ৫টিই এখন খালি। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকের কিস্তি দিতে হয় না। যারা ব্যাংক লোন দিয়ে বাড়ি করেছেন তাদের অবস্থা আরো খারাপ।
একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন সোমা হক। বেতন পান ২০ হাজার টাকা। করোনার কারণে বেতন দুই মাস বন্ধ। তাই গ্রামে চলে যাচ্ছেন। সোমা হকের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি জানান, গ্রামে গেলে অন্তত ঘর ভাড়াটা লাগবে না। এই ভরসায় তারা গ্রামের উদ্দেশে চলে যাচ্ছি।
করোনাকালীন অনেকে চাকরি হারিয়েছে, অনেকের আয় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করতে নিজে থাকলেও পরিবার-পরিজনকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছে। গতকাল এমন বেশ কয়েকটি পরিবারকে নগর ছাড়তে দেখা গেছে। ট্রাকভর্তি মালামাল নিয়ে সাথে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছেন তারা।
মানবাধিকার কর্মী রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, শহরে কোনো মানুষ থাকবে না। নগর এখনই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। যারা বেসরকারি চাকরি করতেন তাদের অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের বেতন অর্ধেক হয়ে গেছে। আবার অনেকে চাকরি করছেন ঠিকই; কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না। তাদের শহরে থাকার কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, লকডাউনের সময় ঈদের সময় মানুষ যে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো গ্রামের দিকে ছুটেছিল এখনও মানুষ সেভাবে ছুটছে, তবে তা নাড়ির টানে নয়, অভাবে। শহর ছেড়ে মানুষ তখন থেকেই চলে যেতে শুরু করেছে।
মানবাধিকার কর্মী রেজা কবির বলেন, করোনার কারণে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। মধ্যবিত্তরা চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে আছে। সঙ্কট মোকাবেলা করতে না পারায় তারা শহর ছাড়ছে। মধ্যবিত্তরা চরম সঙ্কটে আছে। তারা কোনো সহায়তা পাচ্ছে না। তারা না সরকারি সহায়তা পাচ্ছে, না চাকরিস্থলে বেতন পাচ্ছে। সরকারের উচিত এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রেজা বলেন, খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মানুষ আর এখন শহরে থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা সবাইকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। তার পরেও অনেকে নগর ছাড়ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবার ফিরবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

© 2019 - All Rights Reversed Daily Shangu
Web Design and Development By: CHOST